জেএসসি প্রস্তুতি : দ্বিতীয় পত্র
দ্বিতীয় পত্র (অনুচ্ছেদ রচনা)
ট্রেন ভ্রমণ
ভ্রমণ মানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বেড়ানো। ভ্রমণ মানব মনে আনন্দ দান করে আর জ্ঞানের পিপাসা মেটায়। সাধারণত স্থল, জল ও আকাশ—এই তিন পথে ভ্রমণ করা যায়। স্থলপথে বাস, সাইকেল, রিকশা, ট্যাক্সি এমনকি পদব্রজেও ভ্রমণ করা যায়। তবে বড় পথ, বৃহৎ পরিসর, আনন্দদায়ক ও ক্লান্তিহীনভাবে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হলো ট্রেন ভ্রমণ। এতে পথে অনেক স্টেশন থাকায় নানা স্টেশনে বিচিত্র মানুষের সঙ্গে ক্ষণিক দেখা হওয়ার সুযোগ ঘটে। পারিবারিকভাবে ট্রেন ভ্রমণে যাওয়া হয় সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময়। বিভিন্ন পেশার লোকদের তাদের জিনিস ফেরি করতে দেখা যায় ট্রেনে। বিভিন্ন স্টেশনে নানা রকম ফেরিওয়ালা বিস্কুট, চানাচুর, আইসক্রিম, মলম, ওষুধ ইত্যাদি ফেরি করে। জানালার পাশে বসলে নদ-নদী, ফসলের মাঠ, বিভিন্ন ব্রিজ যেমন দেখা যায়, তেমনি বিভিন্ন স্টেশনের নামধাম ও ভৌগোলিক জ্ঞানও অর্জন করা যায়। এককথায় ট্রেনে ভ্রমণ করলে যেমন বিচিত্র মানুষের সাক্ষাৎ মেলে, তেমনি বিচিত্র স্থান ও স্থাপনার দর্শন আমাদের মনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা
পাঠাগারের শাব্দিক প্রতিশব্দ হচ্ছে পুস্তকাগার, গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা, অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বই। আর বই সংগৃহীত থাকে পাঠাগারে। পাঠাগার হলো—সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদির এক বিশাল সংগ্রহশালা। পাঠাগারের বইয়ের ভাণ্ডারে সঞ্চিত হয়ে আছে মানব সভ্যতার শত শত বছরের হৃদয়স্পন্দন। এটি মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে থাকে। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক কাল আগে থেকেই পাঠাগারের প্রচলন ছিল। তখন মানুষ জ্ঞান সঞ্চিত করে রাখত পাথর, পোড়ামাটি, পাথরের গা, প্যাপিরাস, ভূর্জপত্র বা চামড়ায়। খ্রিস্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরে, প্রাচীন গ্রিসেও পাঠাগারের অস্থিত্ব ছিল। ভারতে প্রাচীনকালে পণ্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। আধুনিককালে বিজ্ঞানের সহায়তায় উন্নত পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত পাঠাগারের মধ্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকায় ‘কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ উল্লেখযোগ্য। এ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এ ছাড়া ঢাকায় বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি, খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার উল্লেখযোগ্য। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে নানা রকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাধারণ ও জাতীয় পাঠাগার উল্লেখযোগ্য। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বলে এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের প্রয়োজনে যে পাঠাগার গড়ে ওঠে, সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্টীয়ভাবেও পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এগুলোই জাতীয় পাঠাগার। এই পাঠাগারগুলো মানুষের ক্লান্ত বুভুক্ষু মনে আনন্দের সঞ্চার করে। তার জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগিয়ে তোলে। পাঠাগারের মাধ্যমেই একটি জাতি উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে।
পাঠাগারের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’
শহীদ মিনার
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হেস্টেল প্রাঙ্গণে স্তম্ভ নির্মিত হয়, যা ‘শহীদ মিনার’ নামে পরিচিত। এই মিনার প্রথম নির্মিত হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণকাজ—সবই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়।
বর্তমান শহীদ মিনারের পূর্ব-দক্ষিণ কোনে শহীদদের রক্তে ভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু ও ছয় ফুট চওড়া ভিত্তির ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর গায়ে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণের পরপরই এটি শহরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন।
১৯৫৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও ভাষাশহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৫৭ সালে শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী মেডিক্যাল হোস্টেল প্রাঙ্গণের একাংশে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে এ মিনার উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম।
দ্বিতীয় পত্র (অনুচ্ছেদ রচনা)
ট্রেন ভ্রমণ
ভ্রমণ মানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বেড়ানো। ভ্রমণ মানব মনে আনন্দ দান করে আর জ্ঞানের পিপাসা মেটায়। সাধারণত স্থল, জল ও আকাশ—এই তিন পথে ভ্রমণ করা যায়। স্থলপথে বাস, সাইকেল, রিকশা, ট্যাক্সি এমনকি পদব্রজেও ভ্রমণ করা যায়। তবে বড় পথ, বৃহৎ পরিসর, আনন্দদায়ক ও ক্লান্তিহীনভাবে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হলো ট্রেন ভ্রমণ। এতে পথে অনেক স্টেশন থাকায় নানা স্টেশনে বিচিত্র মানুষের সঙ্গে ক্ষণিক দেখা হওয়ার সুযোগ ঘটে। পারিবারিকভাবে ট্রেন ভ্রমণে যাওয়া হয় সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময়। বিভিন্ন পেশার লোকদের তাদের জিনিস ফেরি করতে দেখা যায় ট্রেনে। বিভিন্ন স্টেশনে নানা রকম ফেরিওয়ালা বিস্কুট, চানাচুর, আইসক্রিম, মলম, ওষুধ ইত্যাদি ফেরি করে। জানালার পাশে বসলে নদ-নদী, ফসলের মাঠ, বিভিন্ন ব্রিজ যেমন দেখা যায়, তেমনি বিভিন্ন স্টেশনের নামধাম ও ভৌগোলিক জ্ঞানও অর্জন করা যায়। এককথায় ট্রেনে ভ্রমণ করলে যেমন বিচিত্র মানুষের সাক্ষাৎ মেলে, তেমনি বিচিত্র স্থান ও স্থাপনার দর্শন আমাদের মনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা
পাঠাগারের শাব্দিক প্রতিশব্দ হচ্ছে পুস্তকাগার, গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা, অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বই। আর বই সংগৃহীত থাকে পাঠাগারে। পাঠাগার হলো—সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদির এক বিশাল সংগ্রহশালা। পাঠাগারের বইয়ের ভাণ্ডারে সঞ্চিত হয়ে আছে মানব সভ্যতার শত শত বছরের হৃদয়স্পন্দন। এটি মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে থাকে। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক কাল আগে থেকেই পাঠাগারের প্রচলন ছিল। তখন মানুষ জ্ঞান সঞ্চিত করে রাখত পাথর, পোড়ামাটি, পাথরের গা, প্যাপিরাস, ভূর্জপত্র বা চামড়ায়। খ্রিস্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরে, প্রাচীন গ্রিসেও পাঠাগারের অস্থিত্ব ছিল। ভারতে প্রাচীনকালে পণ্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। আধুনিককালে বিজ্ঞানের সহায়তায় উন্নত পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত পাঠাগারের মধ্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকায় ‘কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ উল্লেখযোগ্য। এ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এ ছাড়া ঢাকায় বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি, খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার উল্লেখযোগ্য। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে নানা রকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাধারণ ও জাতীয় পাঠাগার উল্লেখযোগ্য। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বলে এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের প্রয়োজনে যে পাঠাগার গড়ে ওঠে, সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্টীয়ভাবেও পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এগুলোই জাতীয় পাঠাগার। এই পাঠাগারগুলো মানুষের ক্লান্ত বুভুক্ষু মনে আনন্দের সঞ্চার করে। তার জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগিয়ে তোলে। পাঠাগারের মাধ্যমেই একটি জাতি উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে।
পাঠাগারের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’
শহীদ মিনার
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হেস্টেল প্রাঙ্গণে স্তম্ভ নির্মিত হয়, যা ‘শহীদ মিনার’ নামে পরিচিত। এই মিনার প্রথম নির্মিত হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণকাজ—সবই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়।
বর্তমান শহীদ মিনারের পূর্ব-দক্ষিণ কোনে শহীদদের রক্তে ভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু ও ছয় ফুট চওড়া ভিত্তির ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর গায়ে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণের পরপরই এটি শহরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন।
১৯৫৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও ভাষাশহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৫৭ সালে শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী মেডিক্যাল হোস্টেল প্রাঙ্গণের একাংশে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে এ মিনার উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম।
EmoticonEmoticon