একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনি ঃ অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি : অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্ন

মো: নিজাম খান, সহযোগী অধ্যাপক আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ খুলনা  


উদ্দীপক ১

আবদুল আলিম তার বাড়ির আঙিনায় একটি মুরগির খামার করতে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। এ ঋণের বিপরীতে তাকে ব্যাংকে কোনো জামানত গচ্ছিত রাখতে হয়নি। অবশ্য এখন বেশ কয়টি ব্যাংক ও সংস্থা এ ঋণদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

ক. গ্রামীণ ব্যাংক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

খ. ক্ষুদ্রঋণ বলতে কী বোঝায়?

গ. আব্দুল আলিম তার কাজে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করায় যেসব সুবিধা পেয়েছে তার বিবরণ দাও।

ঘ. বাংলাদেশ সরকারের দুটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্রঋণদান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করো।



উত্তর :

ক. ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. গ্রামের ভূমিহীন কৃষক ও দরিদ্র মানুষদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য বিনা জামানতে অল্প টাকার যে ঋণ প্রদান করা হয়, তাকেই ক্ষুদ্রঋণ বলে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের উদ্যোক্তা এবং তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ এ দেশে এ ঋণের আদি উত্পত্তিস্থল। এখানে মূলত গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে একেকটি টার্গেট করে টার্গেট গ্রুপকে ঋণ প্রদান করা হয়। আগে এ ঋণের পরিমাণ দুই হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলেও বর্তমানে তা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকাও হয়ে থাকে।

গ. আব্দুল আলিমের জীবিকা অর্জনের জন্য স্বল্প মূলধনে ছোটখাটো কর্মোদ্যোগের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

১. গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করার সুবিধা পাওয়া যায়। গ্রামীণ ব্যাংক জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করে বলে সহজেই অর্থায়নের ব্যবস্থা করা যায়।

২. ক্ষুদ্র কর্মোদ্যোগের ক্ষেত্রে অল্প অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক এ ঋণের চাহিদা মেটাতে পারে।

৩. বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে, যা গ্রামীণ ব্যাংকে প্রয়োজন হয় না; ফলে আনুষ্ঠানিকতার দুর্ভোগ তাকে পোহাতে হয় না।

৪. গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রদত্ত ঋণ উত্পাদনশীল খাতে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা তদারকি করে। ফলে ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের  উপরিউক্ত সুবিধাগুলো থাকায় আব্দুল আলিম তার মুরগির খামারের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের তদারকিতে এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। সুতরাং দেখা যায় আব্দুল আলিম তার কাজে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করায় বিভিন্ন ঋণের সুবিধা ভোগ করছে।

ঘ. বাংলাদেশ সরকারের ক্ষুদ্র ঋণদান কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এবং কর্মসংস্থান ব্যাংক।

বাংলাদেশে সরকারি খাতে কার্যরত ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড’ অন্যতম। দেশের পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে  এ সংস্থাটি ১৯৯০ সাল থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে আসছে। বর্তমানে সংস্থাটি বিভিন্ন দারিদ্র্য নিরসনমূলক উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করছে। এ বোর্ড ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কোনো বিশেষ ফসল চাষ করার জন্য ‘ফসলি ক্ষুদ্রঋণ’ প্রদান করে। সংস্থাটি গ্রামের দরিদ্র কৃষক, বিত্তহীন পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি তার প্রদত্ত ক্ষুদ্রঋণ উত্পাদনক্ষম করার জন্য ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও প্রদান করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ দান কার্যক্রমের সঙ্গে যেসব সংস্থা জড়িত রয়েছে, তার মধ্যে ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক’ অন্যতম। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ ব্যাংক দেশের বেকার যুবক-যুবতীদের উত্পাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে আসছে। এ ব্যাংক তাঁতের কাপড় তৈরি, হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করছে। ব্যাংকটি গত কয়েক বছর থেকে শিল্প-কারখানার স্বেচ্ছা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ সরকারের এ দুটি সংস্থা ঋণ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।



উদ্দীপক ২

সফিক কম্পানির শেয়ার ক্রয় না করে বন্ড ক্রয় করে। তার ধারণা—বন্ড থেকে যেমন সুবিধা পাওয়া যায় তেমনটি শেয়ার থেকে পাওয়া যায় না। বন্ড থেকে নির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত আয় পাওয়ায় তার এ রকম ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।

(ক) রাইট শেয়ার কাকে বলে?

(খ) জিরো কুপন বন্ড ও কুপন বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কী?

(গ) বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়নের সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করো।

(ঘ) বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট অবস্থা বিশ্লেষণ করো।



উত্তর :

ক. কম্পানির জন্য অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের ক্রয়কৃত শেয়ারের নির্দিষ্ট অনুপাতে যে নতুন শেয়ার ক্রয়ের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়, তাকে রাইট শেয়ার বলে।

খ) জিরো কুপন বন্ড ও কুপন বন্ডের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে—

১. জিরো কুপন বন্ড তার গায়ে লিখিত মূল্যে বা তার চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কুপন বন্ড তার গায়ে লিখিত মূল্যেই বিক্রি করা হয়।

২. জিরো কুপন বন্ডে ক্রয়মূল্য ও পরিশোধ মূল্যের পার্থক্যই  হলো বন্ড ক্রেতা তথা ঋণদাতার আয়। অন্যদিকে কুপন বন্ডের গায়ে লিখিত নির্দিষ্ট সুদের হারই হলো বন্ড ক্রেতার আয়।

৩.  জিরো কুপন বন্ড সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু কুপন বন্ড সুদের হারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

গ) বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়নে কতগুলো সুবিধা রয়েছে।

১. ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে উচ্চ হারে সুদ প্রদান করতে হয়। এ জন্য কম্পানির উত্পাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে কম্পানির খরচ কম হয়; কারণ এ ধরনের ঋণের সুদের হার কম হয় এবং শেয়ারের চেয়ে এটি কম খরচে বিক্রি করা যায়।

২. কম্পানি আইন অনুযায়ী বন্ডের সুদ করবাদযোগ্য খরচ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এই মাধ্যমে অর্থায়ন করলে কম্পানি কর রেয়াত পায়।

৩. বন্ডধারকদের কোনো ভোটাধিকার থাকে না। তাই তারা কম্পানির ব্যবস্থাপনার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে কম্পানি স্বাধীনভাবে তার কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে।

৪. বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে বন্ডের মালিকদের শেয়ারহোল্ডারদের মতো কারবারের লোকসান বা দায় বহন করতে হয় না।

৫. কখনো শেয়ারবাজার খুব অস্থির হয়ে পড়লে বাজারে শেয়ার গ্রহণযোগ্য হয় না। তখন কম্পানির জন্য বন্ডই তহবিলের উৎস হতে পারে।

৬. কম্পানি গঠনের পর শেয়ারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সংকুলান না হলে কম্পানি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এভাবে দেখা যায়, বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে কম্পানি বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারে।

ঘ. বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে কিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ লোকই শেয়ার সংক্রান্ত ন্যূনতম জ্ঞানও রাখে না। তা ছাড়া বিভিন্ন কম্পানি কর্তৃক সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা না ডাকা, লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করা সঠিক লাভ-ক্ষতির হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ না করা ইত্যাদি কারণে শেয়ারবাজারের ওপর জনগণের আস্থা একরকম নেই বললেই চলে। এসব ছাড়াও শেয়ারবাজারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও তদারকির জন্য গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (BSEC) তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে না। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দু-দুবার ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে ধসের সম্মুখীন হচ্ছে। লাখ লাখ  ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছে। কন্ট্রোলার অব ক্যাপিটাল ইস্যুর সীমিত নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, শেয়ার মার্কেটে কিছু লোভী দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর চতুর কারসাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা, অনুন্নত অবকাঠামো, আমলাতন্ত্র, মূলধনের অভাব ইত্যাদি কারণে শেয়ার মার্কেটে ব্যাপক দরপতন ঘটে। অবশ্য বিগত বছর দুয়েক থেকে অবস্থার উন্নতি ঘটছে। এখন শেয়ারগুলোর দাম খুব একটা ওঠানামা করে না। শেয়ারবাজারের অস্থিরতা কাটাতে সরকারও যথেষ্ট তত্পর। এরই মধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত সব কম্পানির স্পন্সরকে ওই কম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা এবং কম্পানি পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

এসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বর্তমানে শেয়ার মার্কেটে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »