কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে?
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং

প্রশ্ন-১ নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং এর আলোকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

‘খ’ ব্যাংক কর্মরত জনাব করিম সাহেব ঈদের জন্য ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট তুলে আনলে তার ৭ বছরের কন্যা সব টাকার নোটের উপর ‘ক’ ব্যাংকের নাম লেখা কেন তা জানতে চায়।



ক.কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে?

খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ হিসাবে কী জমা রাখে? ব্যাখ্যা কর।

গ. ‘ক’ ব্যাংক কী ধরনের ব্যাংক? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.‘খ’ ব্যাংকের তারল্য সংকটে ‘ক’ ব্যাংক কী ভূমিকা রাখবে? আলোচনা কর।

উত্তর:

ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল তালিকাভূক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে তার মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। একে বিধিবদ্ধ রিজার্ভ বলা হয়। এই রিজার্ভের প্রতিদানস্বরূপ বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন তারল্য সংকটে পড়ে অন্যান্য উত্স থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ সরবরাহ করে থাকে।

গ. উদ্দীপকের ‘ক’ ব্যাংক একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে মুদ্রামান সংরক্ষণ ও দেশের অর্থনীতির ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব দানের উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার নিজ দায়িত্বে ও নিয়ন্ত্রণে যে ব্যাংক গঠন ও পরিচালনা করে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সুসংহতভাবে গঠন ও নিয়ন্ত্রণ, নোট ও মুদ্রা প্রচলন, মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ, ঋণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে নোট ও মুদ্রা প্রচলনের একক ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক নোট ও মুদ্রা প্রচলন করতে পারে না।

উদ্দীপকের ‘ক’ ব্যাংক নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে। মুদ্রাবাজারের চাহিদা অনুযায়ী নোট ও মুদ্রা প্রচলনের মাধ্যমে ‘ক’ ব্যাংকটি মুদ্রার মান সংরক্ষণে সহায়তা করে ও মুদ্রাবাজার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও কোনো দেশের নোট ও মুদ্রার গায়ে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম লেখা থাকে। সুতরাং উদ্দীপকের সবগুলো টাকার নোটের উপর ‘ক’ ব্যাংকের নাম লেখা থাকায় একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ‘ক’ ব্যাংকটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ ব্যাংকের তারল্য সংকটে ‘ক’ ব্যাংক ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে তারল্য সংরক্ষণে সহযোগীতা করে।

উদ্দীপকের ‘ক’ ব্যাংকটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ‘খ’ ব্যাংকটি ‘ক’ ব্যাংকের তালিকাভূক্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী সকল তালিকাভূক্ত ব্যাংককে তাদের মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা রাখতে হয়। একে বিধিবদ্ধ রিজার্ভ বলা হয়। এই বিধিবদ্ধ রিজার্ভের প্রতিদানস্বরূপ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভূক্ত ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে ঋণ সুবিধাসহ ব্যাংকিং সেবা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

উদ্দীপকের ‘খ’ ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়ে অন্যান্য উত্স থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ‘ক’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে তারল্য সংরক্ষণে সহায়তা করে। এর ফলে ‘খ’ ব্যাংক তার গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ সরবরাহ করে এবং ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের আস্থা বজায় থাকে।

পরিশেষে বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য রক্ষাব্যবস্থার কারণে উভয়ের মধ্যে নির্দেশক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »