বীজগণিতের জনক আল খারিজমীকে নিয়ে কিছু তথ্য


মুহাম্মদ ইবন মুসা আল খারিজমী ছিলেন পারস্যের একজন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, ভূ-তাত্ত্বিক ও বাগদাদের জ্ঞানগৃহের একজন উঁচুস্তরের পণ্ডিত। ধারণা করা হয়, ৭৮০ সালের কাছাকাছি কোন সময়ে বাগদাদে তার জন্ম। জ্ঞানগৃহে (হাউজ অব উইজডম) যারা কাজ করতেন, তাদের মাঝে খারিজমী ছিলেন অন্যতম। খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে তার জ্ঞানের পরিধির সীমা আরো বিস্তৃত হয়েছিল। খলিফা আল মামুন হচ্ছেন বিখ্যাত খলিফা হারুন আল-রশীদের ছেলে। জ্ঞানগৃহ হচ্ছে এমন একটি শিক্ষা কেন্দ্র যেখানে বৈজ্ঞানিক সকল গবেষণা ও শিক্ষাদান সম্পর্কে আলাপ আলোচনা ও বিস্তৃত গবেষণা করা হত। আসুন আজ আমরা আল খারিজমী সম্পর্কে কিছু জেনে নিইঃ
১) আল খারিজমীকে বীজগণিতের জনক বলা হয়ে থাকে। তবে তিনি গণিতের শাখায় অ্যালগরিদম নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেন এবং বর্তমানের অ্যালগরিদমের যে রূপ, তার অনেকটাই পূর্ণতা লাভ পেয়েছে আল খারিজমীর গবেষণার ফলে। তাই তাকে কেউ কেউ কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক বলেও অভিহিত করে থাকেন।
২) তার লেখা বিখ্যাত বই হচ্ছে হিসাব আল-জাবর ওয়া-আল-মুকাবালা। গণিতের শাখায় এই বইটি বিখ্যাত একটি বই এবং এতে নানা ধরণের অধ্যায় সংযোজিত করা হয়েছে। এছাড়াও জ্যামিতিক উপায়ের সাহায্যে তিনি নানা ধরণের জটিল সমস্যার সমাধান এই বইয়ের সাহায্যে দেখিয়েছেন।
আল খারিজমীকে নিয়ে লেখা কিছু আরবী ভাষায় বচন ছবি সূত্রঃ গুগল
আল খারিজমীকে নিয়ে লেখা কিছু আরবী ভাষায় বচন
ছবি সূত্রঃ গুগল
৩) আজকে আমরা যে জ্যামিতির বাক্সে চাদা ব্যবহার করি, তার অনেকটাই এসেছে খারিজমীর হাত ধরে। তিনি সূর্যের গতিপথ, চন্দ্র কিভাবে ঘুরছে, জোয়ার ভাটা কখন হয় ইত্যাদি সম্পর্কে নানা ধরণের তথ্য দিয়েছেন তার বিখ্যাত যিজ আল সিনধিন্দ নামক বইটিতে। তার এই বইটির মাধ্যমে বোঝা যায়, সেসময়কার আরব পণ্ডিতেরা গণিত নিয়ে বেশ উঁচুমানের ধারণা পোষণ করতেন।
৪) বর্তমানের মানুষ যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করছে, তা নিয়ে বিশদ বিবরণ আল খারিজমী আজ থেকে ১২০০ বছর আগে লিখে গিয়েছেন।

৫) ভূ-তত্ত্ব নিয়েও খারিজমীর নানা গবেষণা ছিল। টলেমী পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে যে মতামত ব্যক্ত করে গিয়েছেন, খারিজমী তা নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার লেখা বিখ্যাত বই “সুরাত আল-আরদ” (পৃথিবীর রুপ) -এ তিনি পৃথিবীর গঠন ও পৃথিবীতে কি কি ধরণের মূল্যবান পদার্থ থাকতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
৬) বর্তমানে আমরা ঘড়ি ব্যবহার করি সময় দেখবার জন্য। আগেকার যুগে কিন্তু এমন ঘড়ি ব্যবহার করা যেত না। তখন মানুষ সূর্য দেখে ঠিক করত সময় কত হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা একটি কাঠির ব্যবহার করত ও তা মাটিতে পুঁতে খেয়াল করত ছায়ার ওঠানামা কেমন হচ্ছে। খারিজমী হেলনিস্টিক ও সেমিতিয় এই ধারণাকে আরও উন্নত করেন এবং এর সাহায্যে ঘড়ি দেখবার ধারণাকে আরো প্রতিষ্ঠিত করেন।


Share this

Related Posts

Previous
Next Post »