এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি
অর্থনীতি প্রথমপত্র
মো. শাহজাহান সীমান্ত
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি
বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ, রংপুর।
মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা
ও এর সমাধান
প্রশ্ন : মিশ্র অর্থব্যবস্থার (Mixed Economy) বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
উত্তর : যে অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় উভয় মালিকানাই স্বীকৃত এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আংশিক ব্যক্তি উদ্যোগে বাজার প্রক্রিয়ায় এবং আংশিক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশে পরিচালিত হয়, তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। মূলতঃ ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ত্রুটিগুলো বর্জন ও গুণগুলো গ্রহণ করে উন্নততর এক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমেই মিশ্র অর্থব্যবস্থা গড়ে উঠে।
মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :
সরকারি ও বেসরকারি খাতের উপস্থিতি : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের উপস্থিতি স্বীকৃত।
সম্পদের মালিকানা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা সরকারি ও বেসরকারি উভয়ই হয়ে থাকে।
ব্যক্তি স্বাধীনতা : ব্যক্তির যে কোনো পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত।
ভোগের স্বাধীনতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির ভোগের স্বাধীনতা স্বীকৃত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় পণ্যের ভোগে রাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে বা অনুমতি নিতে হয়।
উৎপাদনের স্বাধীনতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির উৎপাদনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় পণ্যের উৎপাদনে রাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে।
স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাজারে চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বাজার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে থাকে বা করতে পারে।
মুনাফা অর্জন : ব্যক্তি খাতের উপস্থিতি থাকায় মিশ্র অর্থব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন স্বীকৃত।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি পরিকল্পনা অনুসারে বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রিত ও সরকারি খাত পরিচালিত হয়। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।
সামাজিক নিরাপত্তা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সামাজিক স্বীকৃত। রোগ, শোক, দুর্ঘটনা, বেকারত্ব, অক্ষমতা ইত্যাদির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় বেসরকারি খাতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়োজনবোধে সরকার Private Sectorকে Public Sector-এ এনে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
সরকারের জবাবদিহিতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারের জবাবদিহিতা স্বীকৃত। যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান অলাভজনক হয় তাহলে সরকার তা Private Sector-এ হস্তান্তর করা হয়।
আয় বৈষম্য : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় যেহেতু সম্পদের উপর ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত, তাই সমাজে আয় বৈষম্য বিদ্যমান থাকে।
মুদ্রাস্ফীতির উপস্থিতি : মিশ্র অর্থনীতিতে যেহেতু ব্যক্তি উদ্যোগ স্বীকৃত এবং মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তাই অনেক সময় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতিও দেখা দিতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে একক আদর্শের কোনো নীতিই সব সময় সব সমাজে কার্যকর নয়। মিশ্র অর্থব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়।
অর্থনীতি প্রথমপত্র
মো. শাহজাহান সীমান্ত
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি
বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ, রংপুর।
মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা
ও এর সমাধান
প্রশ্ন : মিশ্র অর্থব্যবস্থার (Mixed Economy) বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
উত্তর : যে অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় উভয় মালিকানাই স্বীকৃত এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আংশিক ব্যক্তি উদ্যোগে বাজার প্রক্রিয়ায় এবং আংশিক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশে পরিচালিত হয়, তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। মূলতঃ ধনতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ত্রুটিগুলো বর্জন ও গুণগুলো গ্রহণ করে উন্নততর এক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমেই মিশ্র অর্থব্যবস্থা গড়ে উঠে।
মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :
সরকারি ও বেসরকারি খাতের উপস্থিতি : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের উপস্থিতি স্বীকৃত।
সম্পদের মালিকানা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা সরকারি ও বেসরকারি উভয়ই হয়ে থাকে।
ব্যক্তি স্বাধীনতা : ব্যক্তির যে কোনো পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত।
ভোগের স্বাধীনতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির ভোগের স্বাধীনতা স্বীকৃত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় পণ্যের ভোগে রাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে বা অনুমতি নিতে হয়।
উৎপাদনের স্বাধীনতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির উৎপাদনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় পণ্যের উৎপাদনে রাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে।
স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাজারে চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বাজার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে থাকে বা করতে পারে।
মুনাফা অর্জন : ব্যক্তি খাতের উপস্থিতি থাকায় মিশ্র অর্থব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন স্বীকৃত।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি পরিকল্পনা অনুসারে বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রিত ও সরকারি খাত পরিচালিত হয়। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।
সামাজিক নিরাপত্তা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সামাজিক স্বীকৃত। রোগ, শোক, দুর্ঘটনা, বেকারত্ব, অক্ষমতা ইত্যাদির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় বেসরকারি খাতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়োজনবোধে সরকার Private Sectorকে Public Sector-এ এনে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
সরকারের জবাবদিহিতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারের জবাবদিহিতা স্বীকৃত। যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান অলাভজনক হয় তাহলে সরকার তা Private Sector-এ হস্তান্তর করা হয়।
আয় বৈষম্য : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় যেহেতু সম্পদের উপর ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত, তাই সমাজে আয় বৈষম্য বিদ্যমান থাকে।
মুদ্রাস্ফীতির উপস্থিতি : মিশ্র অর্থনীতিতে যেহেতু ব্যক্তি উদ্যোগ স্বীকৃত এবং মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তাই অনেক সময় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতিও দেখা দিতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে একক আদর্শের কোনো নীতিই সব সময় সব সমাজে কার্যকর নয়। মিশ্র অর্থব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়।
EmoticonEmoticon