এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি অর্থনীতি প্রথমপত্র


এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি

অর্থনীতি প্রথমপত্র


মো. শাহজাহান সীমান্ত

সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি

বেগম রোকেয়া সরকারী কলেজ, রংপুর

মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা

ও এর সমাধান

প্রশ্ন : ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

উত্তর : যে অর্থব্যবস্থায় আল্লাহ্তালার দেয়া বিধান অনুযায়ী মানুষের জীবিকা অর্জন ও জাগতিক সব অর্থনৈতিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়, তাকে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বলা হয়।

ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :

ইসলামী শরিয়ত : ইসলামী অর্থব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালা ইসলামী শরিয়তের ওপর নির্ভরশীল। তাই ইসলামী অর্থনীতিতে পবিত্র কোরআনের নির্দেশ, ইসলামের মূল দর্শন, রাসূল (সা.)-এর হাদিসের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সমাধান করা হয়।

সম্পদের মালিকানা : এ অর্থনীতি অনুযায়ী প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই সব সম্পদের মালিক এবং মানুষ তার বান্দা। মানুষ কেবল সম্পদের আমানতদার হিসেবে সম্পদের ভোগদখল করে। এতে বোঝা যায় ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পদের ওপর বজায় থাকলেও সম্পদের অপচয় কিংবা অপব্যবহারের অধিকার ব্যক্তির নেই।

নৈতিকতা : ইসলামী অর্থব্যবস্থা নৈতিকতার সঙ্গে জড়িত। নৈতিকতাবিরোধী কোনো অর্থনৈতিক কার্যক্রম ইসলামী অর্থনীতি অনুমোদন করে না।

ভোগের স্বাধীনতা : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় ভোগের স্বাধীনতা স্বীকৃত কিন্তু তা পরিমিত পরিমাণে। সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বার্থে অপ্রয়োজনী, ক্ষতিকর ও বিলাসবহুল ভোগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে।

শ্রমনীতি : ইসলামে শ্রম শোষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলাম বলে ‘মানুষ যে জন্য পরিশ্রম করবে, সে তাই পাবে।’ ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ভাইয়ের মতো।

অপচয় ও বিলাস পরিহার : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় অপচয় ও বিলাসের কোনো স্থান নেই। আল্লাহতায়ালা বলেছেন,‘অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’

সম্পদের বণ্টন : সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতকরণের জন্য ইসলামে জাকাত, ফিতরা ইত্যাদির মাধ্যমে ধনীদের নিকট হতে অর্থ গরিবদের মধ্যে স্থানান্তরের ব্যবস্থা আছে।

ব্যক্তিস্বাধীনতা : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃত কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়। সমাজের শান্তি হরণকারী ও ক্ষতিকর পণ্যের উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা নিষিদ্ধ।

সুদ নিষিদ্ধ : ইসলামে সুদকে শোষণের হাতিয়ার বলা হয়। এ জন্য কেবল নৈতিকতার দিক থেকে নয়, আইনের দিক থেকেও সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাজার কাঠামো : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আবার জনকল্যাণের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার : জনকল্যাণের স্বার্থে অব্যবহৃত সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের কথা ইসলামে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ হল, ‘পর পর তিনবার কেউ জমিতে আবাদ না করলে তা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।’

রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ : ভোক্তা ও উৎপাদকের কার্যক্রমে প্রয়োজনে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে বলে ইসলামে বলা হয়েছে। অতিমুনাফা, চোরাকারবারি, ফটকা কারবার, অতিমূল্য সরকার কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করবে। জুয়া, লটারি, বাজি ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই।

সামাজিক নিরাপত্তা : সামাজিক নিরাপত্তা ইসলামে স্বীকৃত। হানাফি তার শিরআতুন গ্রন্থে বলেন, ‘খলিফা তার রাষ্ট্রে কোনো ফকিরকে ফকির রাখতে পারবে না, কোনো ঋণীকে ঋণী রাখতে পারবে না, কোনো দুর্বলকে অসহায় রাখতে পারবে না, কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দিতে পারবে না বরং প্রতিটি বস্ত্রহীনের জন্য বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।

মীরাসী আইন : ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল মীরাসী আইন। মীরাসী আইন এমন এক বিশেষ পন্থা যা নিজের প্রয়োজন পূরণ, আল্লাহর পথে ব্যয় এবং জাকাত আদায় করার পরও যে ধনসম্পদ কোনো স্থানে পুঞ্জিভূত থাকে তাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এবং শ্রেণী অনুযায়ী তা বণ্টন করে দেয়া।

বায়তুল মাল : ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বায়তুল মাল বা সরকারি অর্থ তহবিল গঠন। এ অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় আয়ের একটি অংশ অসহায় ব্যক্তি/রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বায়তুল মালে জমা রাখা হয়।

উত্তরাধিকার আইন : ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল উত্তরাধিকার সূূত্রে সম্পদ প্রাপ্যতা। এ আইনের উদ্দেশ্য হল কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ যতটুকুই থাকুক না কেন তা নিকট ও দূরবর্তী আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে শ্রেণী অনুযায়ী বণ্টন করে দেয়া।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসলামী অর্থনীতি হলা একটি আদর্শভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়া সমাজের জন্য কল্যাণকর এবং শোষণহীন। উৎপাদনের উদ্দেশ্য হল হালাল ভোগ্যদ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণকে নৈতিকতার সঙ্গে আদর্শভিত্তিক জীবনাচারণে উদ্বুদ্ধ করা।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »