জেএসসি পরীক্ষা প্রস্তুতি - বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গত ঈদের ছুটিতে রাহিল তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভ্রমণে গিয়ে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়। তাদের গায়ের রং ঈষৎ হলদেটে, মুখমণ্ডল গোলাকার, নাক চ্যাপ্টা, চুল সোজা ও কালো। পরিবারের পিতা সংসার ব্যবস্থাপনা করেন। এসব দেখে রাহিলের রংপুরের বন্ধু বলল, ‘আমাদের অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবন সম্পূর্ণ এদের মতো।’
ক. রাখাইনদের ঐতিহ্যের প্রতীক কী?
খ. মারমাদের ধর্মীয় জীবন ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাহিলের রংপুরের বন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
উত্তর :
ক. রাখাইনদের ঐতিহ্যের প্রতীক পাগড়ি।
খ. মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা এ ধর্মেরই অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপন করে। প্রায় প্রতিটি মারমা গ্রামে বৌদ্ধ বিহার ‘কয়াং’ ও বৌদ্ধ ভিক্ষু ‘ভান্তে’দের দেখা যায়। মারমারা বৈশাখী পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, কার্তিকী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা ইত্যাদি দিনে বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে ফুল দিয়ে ও প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধের পূজা করে। কাপ্তাইয়ের অনতিদূরে চন্দ্রঘোনার কাছে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে অবস্থিত ‘চিত্মরম বৌদ্ধ বিহার’ মারমাদের নির্মিত একটি খুবই সুন্দর বৌদ্ধ বিহার। প্রতিবছর বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেখানে বুদ্ধপ্রণাম ও পূজা করতে যায়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীটি হলো চাকমা। নিচে চাকমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো :
চাকমারা নিজেদের তাঁত দিয়ে পোশাক তৈরি করে। চাকমা মেয়েদের পরনের কাপড়ের নাম ‘পিনোন’ ও ‘হাদি’। আগে চাকমা পুরুষরা এ রকম মোটা সুতার জামা, ধুতি ও গামছা পরত এবং মাথায় এক ধরনের পাগড়ি বাঁধত; ইদানীং তারা শার্ট, প্যান্ট ও লুঙ্গি ব্যবহার করে। চাকমা মহিলাদের তৈরি বিভিন্ন কাপড়ের মধ্যে ‘ফুলগাদি’ ও নানা ধরনের ওড়না দেশে-বিদেশে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাকমারা বাঁশ ও বেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর ঝুড়ি, পাখা, চিরুনি, বাঁশি ও বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে।
চাকমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। তারা ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস ও শাকসবজি খেতে ভালোবাসে। তাদের প্রিয় খাদ্য বাঁশকোঁড়ল; বাঁশকোঁড়ল দিয়ে চাকমা মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের রান্না ও ভাজি করে। চাকমারা হাডুডু, কুস্তি ও ‘ঘিলাখারা’ খেলতে ভালোবাসে; ছোট ছেলেমেয়েরা বঁইচি খেলে।
চাকমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো ‘বিজু’; বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিনে চাকমারা ‘বিজু’ উৎসব পালন করে। অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তুলনায় চাকমারা বেশি শিক্ষিত।
ঘ. উদ্দীপকের রাহিলের রংপুরের বন্ধুর অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী হলো সাঁওতাল। নিম্নে রাহিলের বন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতা নিরূপণ করা হলো :
চাকমাদের সামাজিক জীবন লক্ষ করলে দেখা যায়, চাকমা সমাজের মূল অংশ পরিবার। কতগুলো চাকমা পরিবার নিয়ে গঠিত হয় ‘আদাম’ বা ‘পাড়া’, কতগুলো পাড়া নিয়ে মৌজা গঠিত হয়। পাড়াপ্রধানকে হেডম্যান বলে, যিনি মৌজার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করেন। কয়েকটি মৌজা মিলে চাকমা সার্কেল গঠিত হয় এবং এর প্রধান হলেন চাকমা রাজা। চাকমা সমাজে রাজার পদটি বংশানুক্রমিক। চাকমা সমাজ পিতৃসূত্রীয়; এদের পরিবারে পিতাই প্রধান।
সাঁওতালও সমাজ পিতৃসূত্রীয়। তাদের সমাজে পিতার সূত্র ধরে সন্তানের দল ও গোত্রপরিচয় নির্ণয় করা হয়। এদের সমাজের মূল ভিত্তি হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত পরিচালনা করে ‘মাঝি পারণিক’। এরা হলো—মাঝি হারাম, জগমাঝি, পরাণিক, গোডেৎ ও নায়েক। নায়েককে তারা পঞ্চায়েত সদস্য নয়, বরং ধর্মগুরু হিসেবে গণ্য করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, চাকমা ও সাঁওতালদের সামাজিক জীবন সাদৃশ্যপূর্ণ।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »