প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা নিও। আজ আমি তোমাদের জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের ২য় অধ্যায়ের প্রাণীর পরিচিতি বিষয়ের ওপর সৃজনশীল প্রশ্নোওর উপস্থাপন করব।
সৃজনশীল প্রশ্ন
(ক) শাকাসী প্রাণী কী ? ১
(খ) শ্বসনে চিত্রের প্রাণীটির রক্তের ভূমিকা নেই কেন ? ২
(গ) চিত্রে প্রদর্শিত প্রাণীটির রক্ত সংবহনতন্ত্র মুক্ত প্রকৃতির- ব্যাখ্যা কর। ৩
(ঘ) উক্ত তন্ত্রের সংবহন প্রক্রিয়া বর্ণনা কর। ৪
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ঃ
(ক) শাকাসী প্রাণী ঃ যে সকল প্রাণীকূল ঘাস, শস্যদানা, লতাপাতা ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে অর্থ্যাত্ তৃণভোজী (Herbivorous) তাদেরকে শাকাসী প্রাণী বলে।
(খ) উত্তর ঃ সাধারণতঃ ঘাসফড়িং এর রক্ত বর্ণহীন। আর এতে কোন ধরণের রঞ্জক পদার্থ বা হিমোগ্লোবিন থাকে না। অর্থ্যাত্ ঘাসফড়িং এর রক্তে কোন শ্বাসকনিকা থাকে না। ফলে ঘাসফড়িং এর রক্ত পরিবহন করতে পারে না। তাই শ্বসনে ঘাসফড়িং এর রক্তের কোন ভূমিকা নেই।
(গ) উত্তর ঃ চিত্রে ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র (Blood circulatory system) দেখানো হয়েছে। এ সংবহনতন্ত্রে হূদপিন্ড ও ধমনীর মতো বদ্ধ নালীর মধ্য দিয়ে কিছুটা রক্ত প্রবাহিত হলেও রক্তের অধিকাংশ অংশ দেহের সাইনাস এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ তন্ত্রে রক্ত হূদপিন্ড থেকে নালিকাপথে বের হয়ে পরে উন্মুক্ত দেহগহ্বরে প্রবেশ করে এবং দেহ গহ্বর থেকে পুণরায় নালিকাপথে হূদপিন্ডে ফিরে আসে। অর্থ্যাত্ ঘাসফডিং এর রক্ত নির্দিষ্ট নালীতে সীমাবদ্ধ না থেকে হিমোসিল ধরণের দেহগহ্বরের মাধ্যমে সরাসরি দেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে প্রবাহিত হয়। ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্রে শুধু হূদপিন্ড ও ধমনী থাকে, কোন শিরা বা কৌশিকনালী থাকে না। এ ধরনের রক্ত সংবহনতন্ত্রকে এক কথায় উন্মুক্ত সংবহনতন্ত্র (Open circulatory system) বলা হয়ে থাকে। তাই চিত্রে প্রদর্শিত তন্ত্রটি অর্থ্যাত্ ঘাসফড়িং এর সংবহনতন্ত্রটি উন্মুক্ত ধরণের।
(ঘ) উত্তর ঃ চিত্রে উল্লেখিত সংবহনতন্ত্রটি আসলে আর্থোপোডা পর্বের প্রাণী ঘাসফড়িং এর উন্মুক্ত সংবহনতন্ত্র (Open circulatory system)। আর হূদযন্ত্র ও অ্যালারি পেশির সংকোচন ও প্রসারণের ফলেই ঘাসফড়িং এর দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে। অ্যালারি পেশিসমূহের ছন্দোবদ্ধ সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত প্রথমে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস হতে অস্টিয়ার মাধ্যমে হূদপিন্ডে প্রবেশ করে। হূদপিন্ডের ক্রমসংকোচনের মাধ্যমে রক্ত হূিপন্ডের একটি প্রকোষ্ঠ হতে অন্য প্রকোষ্ঠে ধাবমান হয়। ঘাসফড়িং এর রক্তের গতিপথ সবসময়ই পিছনের হূদপিন্ড প্রকোষ্ঠ হতে সামনের দিকে হয়ে থাকে। আর এক্ষেত্রে আন্তঃ প্রকোষ্ঠীয় কপাটিকাগুলো রক্তের একমুখীতাকে নিশ্চিত করে। এভাবে হূদপিন্ডের প্রকোষ্ঠের অস্টিয়াগুলো রক্ত সঞ্চালনের সময় বন্ধ থাকায়, রক্ত হূদপিন্ডের বাইরের সাইনাসে আসতে পারে না। হূদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ হতে রক্ত পৃষ্ঠীয় ধমনী (Dorsal aorta) এর মাধ্যমে বক্ষ অঞ্চল পার হয়ে মস্তিষ্কে এসে পৌঁছায়। এ ধমনীর মাধ্যমে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে বেরিয়ে আসে। তারপর আন্তঃ সাইনাস ছিদ্রপথে দেহের বিভিন্ন ধরণের নড়াচড়া দ্বারা রক্ত পেরিনিউরাল ও পেরিভিসেরাল সাইনাসে যায়। গ্যাসীয় পদার্থের বিনিময়ের সময়ে আন্ত্রিক সংকোচন-প্রসারণ এবং উড়ার সময় পেশির সংকোচন-প্রসারণ, রক্তের এ চলাচলকে তরান্বিত করে। বিভিন্ন সাইনাসে থাকাকালে রক্ত ঐ সাইনাসস্থ বিভিন্ন অঙ্গে প্রবেশ করে। পেরিভিসেরাল সাইনাস হতে রক্ত পুণরায় পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে প্রবেশ করে। সাধারণতঃ এভাবেই রক্ত ঘাসফড়িং এর দেহে চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে।
জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র
অলোক কুমার মিস্ত্রী, জীববিজ্ঞান বিভাগ
EmoticonEmoticon