২০১৬ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি বিজ্ঞান

 সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর: অধ্যায়-১১
প্রিয় শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যায়-১১ থেকে আজ একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের নমুনা দেওয়া হলো।
গ্রীষ্মের ছুটিতে দুপুরবেলায় মামার বাড়ি যাওয়ার পথে বাসের মধ্যে অর্পা জানালা দিয়ে দূরে পিচের রাস্তায় তাকাতেই তার কাছে মনে হলো রাস্তায় পানি জমে আছে। কিন্তু সে যখন ওই স্থান অতিক্রম করল, তখন সে দেখতে পেল সেখানে কোনো পানি নেই, রাস্তাটি একেবারেই শুকনো। ব্যাপারটি তাকে অবাক করল।
ক. অপটিক্যাল ফাইবার কী?
খ. সংকট কোণ বলতে কী বোঝো?
গ. অর্পার কাছে শুকনো রাস্তাটিতে পানি জমে আছে বলে মনে হওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাটির আলোকে মরুভূমিতে সৃষ্ট একটি প্রাকৃতিক ঘটনা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক.
অপটিক্যাল ফাইবার হলো একটি খুব সরু কাচতন্তু। আলোকরশ্মি বহনের কাজে এটি ব্যবহূত হয়।
উত্তর: খ.
সংকট কোণ: কোনো আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে আপতন কোণের জন্য প্রতিসরণ কোণ ৯০০ হয়, অর্থাত্ প্রতিসরিত রশ্মি মাধ্যমের বিভেদতল বরাবর যায়, ঘন মাধ্যমে সেই নির্দিষ্ট আপতন কোণকে ওই দুই মাধ্যমের সংকট কোণ বলে। সংকট কোণকে Oc দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
উত্তর: গ.
গ্রীষ্মের দুপুরে প্রখর রোদে পিচের রাস্তা উত্তপ্ত হয় এবং রাস্তা সংলগ্ন বায়ুস্তর হালকা হয়। ওপরের ঘন স্তর থেকে নিচের হালকা স্তরে আলোকরশ্মি প্রবেশের সময় পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য মরীচিকার সৃষ্টি হয়। ফলে প্রখর রোদে উত্তপ্ত পিচের রাস্তায় সামনের কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখা যায়। আমরা স্থির পানিতে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখে অভ্যস্ত। এ জন্য পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের ফলে রাস্তায় আকাশের প্রতিবিম্ব দেখে অর্পার কাছে মনে হয়েছে রাস্তায় পানি রয়েছে এবং সেখানে আলোর প্রতিফলন ঘটেছে।
উত্তর: ঘ.


উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাটি আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য হয়ে থাকে। মরীচিকা পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
মরুভূমিতে দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে বালু অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বালুসংলগ্ন বায়ুস্তরও তাই উত্তপ্ত হয়। ফলে বায়ুস্তর হালকা হয়। এ জন্য মাটিসংলগ্ন বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়। মাটি থেকে যত ওপরে ওঠা যায়, উষ্ণতা তত কমে। ফলে ক্রমাগত ওপরের বায়ুস্তর ঘন হয়। এতে অনেক দূরের কোনো গাছের মাথা (চিত্র-১) থেকে আলোকরশ্মি নিচের দিকে যাওয়ার সময় ঘন মাধ্যম থেকে ক্রমাগত হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করে। তাই প্রতিসৃত রশ্মি অভিলম্ব থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে। এভাবে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যেতে যেতে আলোকরশ্মি এমন এক স্তরে পৌঁছাবে, যেখানে আপতন কোণ নিচের বায়ুস্তর সাপেক্ষে ওই স্তরের সংকট কোণ থেকে বড় হবে। তখন (চিত্রে O বিন্দু থেকে) পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হবে এবং প্রতিফলিত রশ্মি ক্রমাগত ওপরের দিকে হালকা থেকে ঘন বায়ুস্তরে যাবে। ফলে এবার প্রতিসরিত রশ্মি ক্রমাগত অভিলম্বের দিকে বেঁকে যাবে। এভাবে অবশেষে আলোকরশ্মি যখন কোনো মরুযাত্রীর চোখে এসে পড়ে, তখন সে গাছের উল্টো প্রতিবিম্ব Aর্ দেখতে পায়। মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ এবং উষ্ণতা পরিবর্তনের জন্য বায়ুস্তরের ঘনত্ব অনবরত পরিবর্তিত হতে থাকে। ফলে বায়ুস্তরের মধ্য দিয়ে আসা আলোকরশ্মির দিক তথা A-এর অবস্থান অনবরত পরিবর্তিত হতে থাকে এবং প্রতিবিম্বটি কাঁপছে বলে মনে হয়। ফলে মরুযাত্রীর কাছে প্রতিবিম্বকে কোনো জলাশয়ে প্রতিফলিত গাছের প্রতিবিম্ব বলে মনে হয়। মরুভূমিতে পানির খুব অভাব। তাই মরুযাত্রী পানির আশায় সেদিকে ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে পানি পায় না। এ দৃষ্টিভ্রমকে মরীচিকা বলে।

প্রভাষক
রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »