জেএসসি প্রস্তুতি বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নপরিচয়

অনুধাবনমূলক প্রশ্নঃ

১। ঔপনিবেশিক যুগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : বাংলাদেশে প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনামলকে ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়।

বাংলাদেশে ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর ইংরেজরা শাসন করে। ইংরেজদের এই ২০০ বছরের শাসনকালকে ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়। যদিও এরপর আরো প্রায় দুই দশক আমাদের পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে কাটাতে হয়েছে।

২। প্রত্নসম্পদ বলতে কী বোঝা?

উত্তর : প্রত্নসম্পদ বলতে পুরনো স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য, অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদিকে বোঝায়।

প্রত্ন শব্দের অর্থ পুরনো বা প্রাচীন। প্রত্নসম্পদ বলতে পুরনো স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য, অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদিকে বোঝায়। এসব নিদর্শনের মধ্য দিয়ে সেকালের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, বিশ্বাস-সংস্কার রুচি বা দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

৩। ঔপনিবেশিক যুগে ঢাকার কয়েকটি গির্জার পরিচয় দাও।

উত্তর : ঔপনিবেশিক যুগে ঢাকায় বেশ কয়েকটি গির্জা নির্মিত হয়েছিল।

আঠারো-উনিশ শতকে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি গির্জা নির্মিত হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলো আর্মেনিয়ান চার্চ। এটি নির্মিত হয় আরমানিটোলায় ১৭৮১ সালে। এ ছাড়া উনিশ শতকে ঢাকায় নির্মিত হয় সেন্ট টমাস অ্যাংলিকান চার্চ ও হলিক্রস চার্চ।

৪। ভিক্টোরিয়া পার্ক সম্পর্কে কী জান?

উত্তর : ঢাকার নওয়াব আবদুল গণি একটি পার্ক তৈরি করে ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করেন ভিক্টোরিয়া পার্ক।

নওয়াব আবদুল গণি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ পার্কটি তৈরি করেন। তার আগে এ জায়গাটির নাম ছিল আন্টাঘর ময়দান। আন্টাঘর ময়দানের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৮৫৭ সালের প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এ দেশীয় সৈন্যরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেন।

ইংরেজরা একে বলে সিপাহি বিদ্রোহ। যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরা জিততে পারেনি। বিদ্রোহী সৈন্যদের যাঁরা ঢাকায় ইংরেজদের হাতে বন্দি হন তাঁদের ইংরেজরা এই আন্টাঘর ময়দানে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়। এই ঘটনার ঠিক ১০০ বছর পর ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার জন্য জীবনদানকারী সৈনিকদের স্মৃতিতে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। ভারতবর্ষের শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নামে পার্কটির নাম হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।

৫। পানাম নগর সম্পর্কে কী জান?

উত্তর : পানাম নগর সোনারগাঁয়ে অবস্থিত একটি প্রাচীন নগরী।

সুলতানি আমলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। পরে মোগল যুগে এর গুরুত্ব কমে যায়। কিন্তু তখনো মসলিন শাড়ির উত্পাদন ও ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে এর খ্যাতি ছিল। উনিশ শতকে ধনী ব্যবসায়ীদের অনেকে বসবাসের জন্য সোনারগাঁয়ের পানাম এলাকাটি বেছে নেন। এরা পানামের মূল সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে অনেক ইমারত নির্মাণ করেন। পানাম নগরে এখনা এ রকম ৫২টি ইমারত টিকে আছে। চওড়া পথের দুই পাশে ইমারতগুলো সুন্দরভাবে সাজানো। পথের উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে ২১টি ইমারত।

৬। বড় সরদারবাড়ি কোথায় এবং কেন বিখ্যাত?

উত্তর : বড় সরদারবাড়ি সোনারগাঁয়ের পানাম নগরের পাশে অবস্থিত একটি জমিদারবাড়ি।

এ বাড়িটি স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে এখানে স্থাপিত হয়েছে লোকশিল্প জাদুঘর। এ বাড়ির নির্মাণকাল ১৯০১ সাল। এটি তৈরি হয়েছে বড় বড় দুটি প্রাসাদ নিয়ে। একটি করিডর বা লম্বা বারান্দা দিয়ে প্রাসাদ দুটি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দোতলা একই বাড়িতে রয়েছে ৭০টি কক্ষ। রঙিন মোজাইকের নানা কারুকাজে শোভিত হয়েছে এ বাড়িটি।

৭। জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষিত কয়েকটি পুরাকীর্তির পরিচয় দাও।

উত্তর : জাতীয় জাদুঘরে কায়েকটি বিখ্যাত পুরাকীর্তি সংরক্ষিত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দিনাজপুরের মহারাজার ব্যবহার করা দ্রব্য ও হাতির দাঁতের কারুকাজ করা শিল্পদ্রব্য। বলধার জমিদার নারায়ণ রায় চৌধুরীর সংগ্রহ থেকে আনা পোশাক, হাতির দাঁতের নানা কারুকাজ ও ঢাল-তলোয়ারও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া এখানে রাখা হয়েছে নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদারদের ব্যবহার করা দ্রব্য, পোশাক, ঢাল-তলোয়ার ও সিংহাসন এবং ঢাকার নওয়াবদের ব্যবহার করা কারুকার্যখচিত পোশাক ও জিনিসপত্র।

৮। ময়মনসিংহ জাদুঘরে রক্ষিত মুক্তাগাছার জমিদারদের প্রত্ননিদর্শনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর : ময়মনসিংহ জাদুঘরে মুক্তাগাছার জমিদারদের বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাথরে ফুলদানি, কম্পাস, ঘড়ি, অলংকার, মৃত্পাত্র, কাপড় বোনার যন্ত্র, লোহার সিন্দুক, কেলার সরঞ্জাম, সরস্বতী ও বিষ্ণুমূর্তি, বাঘ, ড্রাগন, বন্য ষাঁড় ও হরিণের মাথা, সোফাসেট ও ইতালিতে তৈরি মূর্তি ইত্যাদি।

৯। রংপুরের তাজহাট জমিদারদের প্রাসাদে রক্ষিত প্রত্ননিদর্শনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর : রংপুরের তাজহাট জমিদারদের প্রাসাদে একটি সংগ্রহশালা রয়েছ। তাজহাট জমিদারদের ব্যবহার করা দ্রব্যসামগ্রী, পোড়ামাটির কাজ, সংস্কৃত ও আরবি ভাষার লেখা পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি স্থান পেয়েছে এই সংগ্রহশালায়।

১০। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে রক্ষিত প্রত্ননিদর্শনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।



উত্তর : কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়ানো নানা জিনিস এবং আলোকচিত্র। জাদুঘর ও সংগ্রহশালায় রাখা বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন দেখে সে যুগের অভিজাত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করতে পারি।


তাহেরা খানম সহকারী শিক্ষক মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »