সপ্তম শ্রেণি বাংলা প্রথম পত্র

সপ্তম শ্রেণি বাংলা প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্ন

লুৎফা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা, ঢাকা

আনন্দ পাঠ

বিচার নেই : আমীরুল ইসলাম



            উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

            বাদশাহ বাবরের ছেলে হুমায়ুনের কঠিন অসুখ হয়েছে। রাজ্যের বড় বড় কবিরাজ, হেকিম চিকিৎসা করে ওষুধ দিচ্ছেন। তাঁর সেবা-যত্নে কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। তার পরও তাঁর অসুখ কিছুতেই ভালো হচ্ছিল না। বরং দিন দিন তাঁর শারীরিক কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছিল। অস্তায়মান সূর্যের মতোই যেন তাঁর জীবন-প্রদীপ নিভে আসছিল। রাজা তখন রাজসভায় সবাইকে ডেকে জানতে চাইলেন—তাঁর কুমার আরোগ্য লাভ করবেন কি না। বাদশাহর প্রশ্নের উত্তরে এক দরবেশ তখন জানালেন, বাদশাহ যদি তাঁর নিজের জীবন পুত্রের জন্য উৎসর্গ করতে পারেন, তবেই কুমার সুস্থ হবেন।



            (ক) ‘বধ্যভূমি’ কী?

            উত্তর : ‘বধ্যভূমি’ হলো—যেখানে মানুষকে হত্যা করা হয়।



            (খ) বাদশাহ কিভাবে বুঝতে পারলেন, মৃত্যু তাঁর দুয়ারে হানা দিয়েছে?

            উত্তর : কোনো ওষুধেই যখন উপকার হচ্ছিল না, তখন বাদশাহ বুঝতে পারলেন যে মৃত্যু তাঁর দুয়ারে এসে হানা দিয়েছে।

         

            আমীরুল ইসলাম রচিত ‘বিচার নেই’ গল্পের বাদশাহর কঠিন অসুখ। সারা দিন তিনি বিছানায় শুয়ে থাকেন। শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হচ্ছে। মনে কোনো সুখ নেই। কাজকর্ম করতে পারেন না। বেঁচে থাকার আর কোনো আশা নেই তাঁর। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসকরা এসে তাঁকে নানা রকম ওষুধ দিলেন, কিন্তু কিছুতেই কোনো উপকার হচ্ছিল না দেখে তিনি বুঝতে পারলেন, মৃত্যু নিকটবর্তী অর্থাৎ তাঁর দুয়ারে এসে হানা দিয়েছে।



            (গ) উদ্দীপকের দরবেশের পরামর্শটি ‘বিচার নেই’ গল্পের কোন চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।

            উত্তর : উদ্দীপকের দরবেশের পরামর্শটি ‘বিচার নেই’ গল্পের গ্রিসের চিকিৎসকের পরামর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত।

         

            উদ্দীপকের বাদশাহ বাবরের ছেলে হুমায়ুনের কঠিন অসুখ হয়েছিল। রাজ্যের কোনো চিকিৎসকই যখন তাঁকে সুস্থ করতে পারছিল না, তখন এক দরবেশ পরামর্শ দিলেন, বাদশাহ যদি তাঁর নিজের জীবন পুত্রের জন্য উৎসর্গ করতে পারেন, তবে তিনি আরোগ্য লাভ করবেন।

            ‘বিচার নেই’ গল্পের বাদশাহ কঠিন অসুখে পড়েছিলেন। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসকরা এসে নানা রকমের ওষুধ দিলেও তাঁর কোনো উপকার হচ্ছিল না। ইরান, তুরান, কাবুল, কান্দাহার থেকে চিকিৎসকরা এসেও তাঁকে সুস্থ করতে পারছিলেন না। শেষে গ্রিসের একজন চিকিৎসক বেশ কয়েক দিন ধরে সব ধরনের পরীক্ষা করলেন বাদশাহকে। নাড়ি টিপে দেখলেন। শরীরের তাপ নিলেন। তারপর তিনি বললেন, বাদশাহর অনেক কঠিন অসুখ হয়েছে। তবে তাঁর চিকিৎসা আছে। একজন অন্ধ বয়স্ক বালক প্রয়োজন, যার হৃদপিণ্ড থেকে ওষুধ তৈরি করতে হবে। সেই ওষুধেই বাদশাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন। উদ্দীপকের দরবেশের পরামর্শটি ‘বিচার নেই’ গল্পের গ্রিসের চিকিৎসকের পরামর্শের সঙ্গে উপর্যুক্তভাবেই সম্পর্কিত।



            (ঘ) “উদ্দীপকটি ‘বিচার নেই’ গল্পের আংশিক ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র”—মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।

            উত্তর : উদ্দীপকটি ‘বিচার নেই’ গল্পের গ্রিসের চিকিৎসকের পরামর্শ দানের সঙ্গেই কেবল সম্পর্কিত, এর বাইরেও গল্পটিতে আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা ‘বিচার নেই’ গল্পের মূল কাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।



            উদ্দীপকের বাদশাহ বাবরের পুত্র অসুস্থ হলে দরবেশ বাদশাহকে, নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন রক্ষার উপায় বাতলে দেন।

            আর ‘বিচার নেই’ গল্পের বাদশাহের রোগমুক্তির উপায় হিসেবে গ্রিসের চিকিৎসক অল্পবয়স্ক বালকের হৃদপিণ্ড দিয়ে তৈরি ওষুধে বাদশাহ সুস্থ হবেন বলে জানান। তখন এক পিতা টাকার বিনিময়ে তাঁর ছেলেকে বিক্রি করে দেন। কাজি রায় দেন, কিশোরের জীবন থেকে রাজার জীবন যেহেতু অনেক মূল্যবান, তাই তার তুচ্ছ জীবনের বিনিময়ে রাজার জীবন রক্ষা করা অন্যায় হবে না। সে অনুযায়ী বালকটিকে যখন বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন রাজা লক্ষ করেন ছেলেটি কান্নার বদলে প্রাণভরে হাসছে। রাজা বিস্মিত হয়ে হাসির কারণ জানতে চাইলে ছেলেটি বলে যে, তার জীবনটাই তো হাসির। তার পিতা টাকার জন্য তাকে বিক্রি করে দেন, কাজি তার হত্যার পক্ষে রায় দেন। আর রাজকর্তা হয়ে বাদশাহ প্রজার জীবন রক্ষা না করে তাকে হত্যার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। বালকের মতে, এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছুই হতে পারে না। বাদশাহ তখন ছেলেটির কথা শুনে তার প্রতি মমতায় কাতর হয়ে পড়েন এবং তাকে মুক্ত করে দেন। কিছুদিন পরে বাদশাহও সুস্থ হয়ে ওঠেন।



            ‘বিচার নেই’ গল্পের এই মূল অংশটুকুই উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘বিচার নেই’ গল্পের আংশিক ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র”—মন্তব্যটি যথার্থ।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »