Posts

পর্বসংখ্যা-২৫

কবিতা : বাঙালির বাংলা

২০১৬ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি : পর্বসংখ্যা-২৫ বাংলা প্রথম পত্র

অধ্যক্ষ, শাহীন ক্যাডেট স্কুল, টাঙ্গাইল
সুপ্রিয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা প্রথম পত্রের ‘কবিতা : বাঙালির বাংলা’ থেকে একটি নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো। 
উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ
স্বদেশের তরে যে করেই হোক রাখিবে সে জীবন
নন্দ বাড়ির হত না বাহির, কোথা কী ঘটে কি জানি,
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি।
নৌকা ফি সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে কলিশন হয়
হাঁটি সর্প, কুকুর, আর গাড়ি চাপা পড়া ভয়।
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল।
সকলে বলিল, “ভালো রে নন্দ, বেঁচে থাক চিরকাল।”
প্রশ্ন : ক) বাঙালির কর্মশক্তি একেবারে নেই বলে তাদের দিব্যশক্তি কী হয়ে আছে? 
খ) জড়তা মানবকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায় কেন? 
গ) উদ্দীপকটির মূল বক্তব্য ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধের বক্তব্যের সাথে কিভাবে সাদৃশ্যপূর্ণÑ ব্যাখ্যা করো। 
ঘ) ‘নন্দলাল যেন কর্মবিমুখ বাঙালির প্রতিরূপ’Ñ উক্তিটি ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর : ক) তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে।
খ) জড়তা শরীরকে অসাড় ও অলস করে বলে তা মানবকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
জড়ত্বের আরেক নাম অবিদ্যা। অবিদ্যা বা নিররতা মানুষকে অন্ধকার ও ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়। কর্মশক্তিকে নিস্তেজ করে রাখে। ফলে জড়তা থেকে আসে আলস্য, কর্মবিমুখতা ও পঙ্গুত্ব। এভাবেই জড়তা মানবকে ক্রমশ মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়।
গ) উদ্দীপকটির মূল বক্তব্য কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বাঙালির বাংলা প্রবন্ধে বর্ণিত বাঙালির স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাঙালির জ্ঞান ও প্রেমশক্তি বিশ্বখ্যাত হলেও শুধু আলস্যের জন্য তাদের মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। জড়তা, আলস্য আর কর্মবিমুখতার জন্য শক্তিশালী বাঙালি জাতি আজ দুর্বল ও ভীরু হয়ে পিছিয়ে পড়ে আছে। কর্মশক্তি নেই বলেই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। নৈরাশ্য, হতাশা, জরা-ব্যাধি আজ বেঁধে রেখেছে বাঙালির সত্তাকে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত নন্দলাল তথাকথিত দেশপ্রেমিকের আদলে ভীরু, অলস, শুভ ও বুলিসর্বস্ব মানুষের প্রতীক। দেশসেবার নামে আপন প্রাণ রা করাই ছিল তার একমাত্র ল্য। তাই নন্দলাল দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ি চড়ত না, নৌকা-স্টিমারে উঠত না, ট্রেনে চেপেও কোথাও যেত নাÑ এমনকি সাপের দংশন, কুকুরের কামড় কিংবা গাড়ি চাপা পড়বে ভয়ে সে পথে বের হওয়া বন্ধ করে আমৃত্যু বিছানায় শুয়ে থাকাকেই শ্রেয় মনে করত। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধেও বাঙালির কর্মবিমুখ, অলস ও ভীরু স্বভাবকে তুলে ধরা হয়েছে। তাই উদ্দীপকটির মূল বক্তব্য ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধের বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এ কথা বলা যায়।
ঘ) ‘নন্দলাল যেন কর্মবিমুখ বাঙালির প্রতিরূপ’Ñ উদ্দীপকের উক্তিটি ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ।
প্রখর জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তির অধিকারী হয়েও বাঙালি জাতি আজ একমাত্র আলস্যের কারণে কর্মহীন জাতিতে পরিণত হয়েছে। জড়তা, ভীরুতা, আশাহীনতা ও কর্মবিমুখতার জন্য অমিততেজি বাঙালি পেছনে পড়ে আছে। তাদের কর্মশক্তি না জাগার কারণে তারা দিব্যশক্তিহীন হয়ে পড়েছে। সীমাহীন জড়তা আজ বাঙালি জাতিকে মৃত্যু অর্থাৎ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছেÑ নন্দলাল ভণ্ড, বাকসর্বস্ব, স্বার্থপর, ভীরু ধরনের মানুষের প্রতীক। তার পণ হলো সে স্বদেশের মঙ্গল করার জন্য যেভাবেই হোক নিজের জীবন রা করবে। অথচ দুর্ঘটনায় প্রাণ চলে যাবার আশঙ্কায় সে পথে বের হয় না। এ জন্য সে গাড়ি, নৌকা-স্টিমার বা ট্রেনে চড়ে কোথাও যায় নাÑ এমনকি সাপ ও কুকুরের কামড়ের ভয়ে সে বিছানায় শুয়ে বসে আজীবন কাটিয়ে তথাকথিত দেশসেবার তৃপ্তি অনুভব করতে থাকে। তার এ স্বভাব-বৈশিষ্ট্য ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে উল্লেখিত বাঙালির বৈশিষ্ট্যের হুবহু প্রতিরূপ।
উদ্দীপকের নন্দলাল যেমন কর্মবিমুখ মানুষের প্রতিচ্ছবি, তেমনি ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধের বাঙালি জাতিও আলস্য বা কর্মহীনতার প্রতিরূপ। নন্দলাল ও বাঙালি জাতি কর্মবিমুখ মানুষের যথার্থ প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। উদ্দীপকের উক্তিটি তাই যথার্থ বলা যায়।
Labels :

Post a Comment